সাবেক বনের রাজা (বন সংরক্ষক) মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চাকরি জীবনে বনের জমি বেহাত, বিক্রিসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি-কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। অনুসন্ধানে তার নামে চার কোটি ২২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বাদী হয়ে কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদক আইন অনুযায়ী, মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হবে। এর আগে একই অভিযোগে সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক মো. ওসমান গণির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।
আসামি মোশাররফ হোসেন ১৯৮৫ সালের ২৪ এপ্রিল বন বিভাগে সহকারী বন সংরক্ষক পদে যোগদান করেন এবং ২০০৫ সালের ২৮ জুন বন সংরক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর নিয়ে তিনি মেঘনা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এজাহারে তার নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়।
স্থাবর সম্পদ: রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক কোটি ৫ লাখ টাকার ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার উপকণ্ঠ পূর্বাচলে (রাজউক) ২০ লাখ টাকায় প্লট ক্রয়, কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে ৪০ শতাংশ জমি, মূল্য ৬০ লাখ টাকা। তার নামে মোট এক কোটি ৮৬ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।
অস্থাবর সম্পদ: ১৮টি ব্যাংক হিসাবে স্থিতি, ব্যবসায়িক পুঁজি, হাতে নগদসহ তার নামে তিন কোটি ২৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে স্থিতি ৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা, জনতা ব্যাংকে ৭ লাখ দুই হাজার টাকা, কমিউনিটি ব্যাংকের একটি হিসাবে ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা, আরেকটি শাখায় ৪৯ হাজার টাকা, এবি ব্যাংকে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, একই ব্যাংকের অন্য একটি হিসাবে ৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ইসলামী ব্যাংকে ৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকে ৪ লাখ ২২ হাজার টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এফডিআর ১০ লাখ টাকার, একই ব্যাংকের অন্য একটি হিসাবে ৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, সোনালি ব্যাংকের হিসাবে এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা, সোনালি ব্যাংকে ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার স্থিতি রয়েছে।
তার নামে ব্যবসায়িক পুঁজি পাওয়া গেছে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকার, ৪৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা মূল্যের ঢাকা মেট্রো-চ-২০-৪৮৬২ নম্বর প্রাইভেটকার, মেঘনা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডে ৬০ টাকার শেয়ার, হাতে নগদ ৭৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
স্থাবর-অস্থাবর: স্থাবর ও অস্থাবর মিলে ৫ কোটি ১১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে তার নামে।
আয়করনথি: আয়কর নথি অনুযায়ী তার নামে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় এক কোটি ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। ব্যয় ব্যতীত তার নামে নিট সঞ্চয় পাওয়া যায় ৮৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। এই হিসাব অনুযায়ী, তার নামে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তার ভোগ-দখলে রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস